কীভাবে শেখা ভালো—পড়ে নাকি ভিডিও দেখে?
আজকের প্রযুক্তির যুগে শেখার পদ্ধতি আগের তুলনায় অনেকটাই বদলে গেছে। বই পড়া এবং ভিডিও দেখা—দুটোই এখন শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শেখার জন্য কোনটা বেশি কার্যকর? বই পড়া, নাকি ভিডিও দেখা। তবে বিষয়টা অনেকটা নির্ভর করে শেখার ধরন, ব্যক্তিগত পছন্দ, এবং পরিস্থিতির ওপর। বই এবং ভিডিও, উভয়েরই রয়েছে নিজস্ব শক্তি ও দুর্বলতা। তবে বই পড়ে বা কোন আর্টিকেল পড়ে শেখা টা সবচেয়ে ভালো।
বই বা আর্টিকেল পড়ে শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এতে গভীর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়া যায়। বইয়ের একটি পৃষ্ঠা বা একটি বিস্তারিত আর্টিকেল আমাদের একটি বিষয়ের অনেক দিকই স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, যা থেকে আমরা নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে জানার সুযোগ পেয়ে থাকি। এই ধরনের শেখার মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে এবং নিজের সময় মতো শিখতে পারি, যা আমাদের শেখার গতিকে নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা দেয়। যখন কোনো বিষয় জটিল মনে হয়, তখন সেটা বারবার পড়ার মাধ্যমে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যায়।
পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে, কারণ এটি তাকে নিজের উদ্যোগে নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করে। বই ও আর্টিকেল আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করায়, যা অন্য কারো চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শেখার এক অনন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। এর ফলে আমরা নতুন নতুন আইডিয়া এবং সৃজনশীল চিন্তার পথ খুঁজে পাই, যা আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বই পড়া শিক্ষার একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি, যা মানুষকে গভীর চিন্তা এবং মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। যখন আপনি বই পড়েন, তখন ধীরে ধীরে আপনার মনে এক ধরনের সৃজনশীল চিন্তা গড়ে ওঠে, যা সেই বিষয়ের গভীরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেমন, দর্শনের জটিল তত্ত্ব বা বিজ্ঞান ও ইতিহাসের বিশ্লেষণী অংশগুলো বুঝতে বই পড়া বেশ কার্যকর। ধরুন আপনি মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে কোনো বই পড়ছেন, এখানে প্রতিটি ধাপ গভীরভাবে চিন্তা করে বিশ্লেষণ করার সময় থাকে, যা ভিডিওতে অনেক দ্রুত কেটে যায়।
গভীর চিন্তা ছাড়াও, বই পড়া সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি সাহিত্য পড়েন, যেমন "হ্যারি পটার" সিরিজ, তখন আপনি নিজের কল্পনায় হগওয়ার্টসের জগত তৈরি করতে পারবেন। বইয়ের লেখকের বর্ণনায় আপনাকে সেই জগত তৈরি করতে সাহায্য করে, কিন্তু সেই কল্পনার পূর্ণতা আপনি নিজেই তৈরি করেন। এই প্রক্রিয়াটি শুধু কল্পনাকে জাগ্রত করে না, বরং আপনার চিন্তার শক্তি ও গভীরতাকেও বাড়িয়ে তোলে।
তবে বই পড়ার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং যারা দ্রুত কিছু শিখতে চান, তাদের জন্য এটি কিছুটা বোরিং হতে পারে। পাশাপাশি, কিছু বিষয়, যেমন বিজ্ঞানের কঠিন প্রক্রিয়া বা কোনো মেকানিক্যাল ডিজাইনের খুঁটিনাটি, শুধু পড়ে বোঝা কঠিন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিডিওর ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অনেক বেশি কার্যকর।
অন্যদিকে, ভিডিও শেখার জন্য দ্রুত এবং কার্যকর একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভিডিওতে আপনি সরাসরি দেখার মাধ্যমে শিখতে পারেন, যা কিছু বিষয় বোঝার ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী। যেমন, রান্না শেখার সময়, ভিডিওতে সরাসরি উপকরণগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা দেখে আপনি দ্রুত শিখতে পারবেন। একইভাবে, যদি আপনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে চান, ভিডিওতে কোড লেখা এবং আউটপুট দেখানোর মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজেই শিখতে পারবেন ।
ভিডিওতে ভিজ্যুয়াল উদাহরণগুলো খুব দ্রুত ও সরাসরি উপস্থাপন করা হয়, যা বিষয়গুলোকে আরও সহজ করে তোলে। ধরা যাক, আপনি কোনো বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যেমন বৃষ্টির সৃষ্টি বা কোনো রসায়নিক বিক্রিয়ার দৃশ্য দেখছেন—এগুলো বইয়ে পড়তে কিছুটা জটিল লাগলেও ভিডিওতে সরাসরি দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। ভিডিওতে বাস্তব উদাহরণ এবং সরাসরি প্রয়োগ দেখানো যায়, যা শেখাকে আরও আকর্ষণীয় এবং বোধগম্য করে তোলে।
তবে ভিডিওর একটি সমস্যা হলো, এটি দ্রুত শেখার জন্য কার্যকর হলেও গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ কম থাকে। বইয়ের মতো ধীরে ধীরে বিশ্লেষণ করার সুযোগ ভিডিওতে থাকে না। ভিডিওর কন্টেন্ট দ্রুত বদলাতে থাকে, যার ফলে মনোযোগ হারানোর আশঙ্কাও বেশি থাকে।
এখানে কোন মাধ্যমটি বেশি কার্যকর, তা নির্ভর করে শেখার ধরন এবং প্রয়োজনের ওপর। যদি আপনি ধীরে ধীরে গভীরভাবে কোনো বিষয় বুঝতে চান, যেমন ঐতিহাসিক কোনো ঘটনাকে বিশ্লেষণ করা বা দর্শনের জটিল তত্ত্ব পড়া, তবে বই পড়া বেশি উপকারী হবে। অন্যদিকে, যদি আপনি দ্রুত এবং ভিজ্যুয়াল প্রক্রিয়ায় কিছু শিখতে চান, যেমন কোনো মেকানিক্যাল কাজ বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা, তাহলে ভিডিও আপনার জন্য ভালো কাজ করবে।
বাস্তবে, শেখার সেরা উপায় হলো বই এবং ভিডিও, উভয় মাধ্যমের মিশ্রণ ব্যবহার করা। তাত্ত্বিক কোনো বিষয় শিখতে বই পড়ুন, আর সেই তত্ত্বের প্রয়োগ বা ভিজ্যুয়াল উদাহরণ দেখতে ভিডিও ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, গণিতের একটি সূত্র শিখতে প্রথমে বইয়ের মাধ্যমে তার বিশ্লেষণ পড়ুন, এরপর সেই সূত্রের ব্যবহার দেখতে একটি ভিডিও দেখুন। এর মাধ্যমে আপনার শেখার প্রক্রিয়াটি গভীর এবং কার্যকরী হয়ে উঠবে।
বই পড়া এবং ভিডিও দেখা—শেখার জন্য দুটোই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, এবং তাদের আলাদা আলাদা নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। শেখার ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমটি সেরা, তা নির্ভর করে বিষয়বস্তু, পরিস্থিতি, এবং ব্যক্তির শেখার ধরনের ওপর। বই আমাদের গভীর চিন্তার সুযোগ দেয়, আর ভিডিও দ্রুত ও ভিজ্যুয়াল শেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে, এই দুটি মাধ্যমের মধ্যে ভারসাম্য রেখে শেখা উচিত, যাতে উভয়ের সুবিধা গ্রহণ করা যায়।
প্রযুক্তিতে উন্নত শিক্ষা
স্বত্ব © ২০২৪ ইকেয়ার একাডেমী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত